প্রসূন আচার্য

সারাদিন বিভিন্ন টিভি চ্যানেল আর ওয়েব পোর্টাল দেখলাম। নিজস্ব সূত্রেও খবর নিলাম। যা দেখলাম, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার থেকে আরম্ভ করে, কলকাতা, বারাসত, হুগলি, দুই বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া সব জায়গাতেই ধর্মঘট মোটের উপর সফল।

এর কারণ তিনটি। ১) ধর্মঘটের কারণগুলি সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। সাধারণ মানুষ কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের উপর বিরক্ত। ২) ভয় ভেঙে অনেক দিন পরে শহর ও গ্রামে বাম ও কংগ্রেস কর্মীরা রাস্তায় নেমেছেন। ৩) তৃণমূল রাস্তায় নেমে খুব বেশি বিরোধিতা করেনি। যা করেছে, পুলিশ দিয়ে করেছে। অর্থাৎ, দু’বছর আগেও পাবলিকের উপরে তৃণমূলের যে ‘গ্রিপ’ ছিল তা অনেকটাই কমেছে।

তা হলে কী দাঁড়ালো? প্রধান মিডিয়াগুলি যে ধারণার সৃষ্টি করছে, লড়াই হবে তৃণমূল আর বিজেপিতে, বাম-কংগ্রেস উড়ে যাবে বা তাদের ভোট বিজেপিতে যাবে, তা হবে না। বামেদের ৭% আর কংগ্রেসের ৫% ভোট নিয়ে তারাও লড়াইয়ের ময়দানে থাকবে। যদি এই জোট পুরো সফল হয়, বেশ কিছু হিসেব কিন্তু পাল্টে যেতে পারে। কারণ, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বাম ও কংগ্রেস কর্মীরা যাঁরা আজ পথে নামলেন, তাঁরা জানেন, তাঁদের পাওয়ার কিছু নেই। হারানোরও কিছু নেই। আত্মবিশ্বাস বাড়ানো ছাড়া। হাসপাতালে ভর্তি আব্দুল মান্নান বা পথে নামা সুজন চক্রবর্তীরাও কিন্তু ভাবেননি, ধর্মঘট এতটা সফল হবে।

আসলে এই রাজ্যে যাঁরা নতুন করে বিজেপি করছেন (৯০% তাই) তাঁরা হয় তৃণমূল বিরোধিতা, বা তৃণমূলের অত্যাচার থেকে রেহাই পাওয়া বা পুনরায় কিছু ধান্দা বা ক্ষমতার জন্য বিজেপি করছেন। বা জল শোভনের মতো ভাইপোর বিরোধিতা ও নারদা মামলার হাত থেকে রেহাই পেতে মোদির দলে যোগ দিয়েছেন। খুব কম লোকই আদর্শগত কারণে বা সঙ্ঘের হিন্দুত্বে উজ্জীবিত হয়ে বিজেপি করছেন। এরা চায় নতুন করে ক্ষমতার স্বাদ। হ্যাঁ, যদি শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেন, সেই কারণেই দেবেন। দিলীপ ঘোষ বা কৈলাস বিজয়বর্গীয়ও তা জানেন।

অর্থাৎ মমতা ব্যানার্জি বা পার্থ চ্যাটার্জি যতই বলুন, বামের ভোট রামে যাচ্ছে, আগামী দিনে কী হবে বলা কঠিন। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে তৃণমূল ও বিজেপি দুই দলে ব্যবধান মাত্র ৩%। এমনও হতে পারে, বাম-কংগ্রেসের নিজস্ব ভোটের একাংশ ২০২১ সালে আবার ফিরে এল। কারণ বিধানসভার ভোটে বিধায়কের ইমেজ ও কাজ অনেকটাই ভোট টেনে দেয়। ফলে এই দুই দলের ভোট ৩%-৭% পর্যন্ত ফিরে আসতে পারে। যা বিজেপিতে গিয়েছিল। যার ফলে জোট ৩০-৩৫ টি আসন জিততে পারে। অর্থাৎ সেই হিসেবে বিজেপির ভোট কমবে।

অন্য দিকে, যে ভাবে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লেখানোর জন্য জেলায় জেলায় দোকান খোলা হয়েছে, কোটি কোটি টাকা ছড়ানো হচ্ছে, তাতে তৃণমূলের থেকে ১০%-১২% ভোট বিজেপিতে চলে যেতে পারে। এটা অবশ্যই পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আমার অনুমান। আর তা যদি হয়, অর্থাৎ সামগ্রিক ভাবে বিজেপির দিকে কিছুটা সুইং, তাতে বিজেপি ও তৃণমূলে লড়াই একেবারে হাড্ডাহাড্ডি হবে।

কে জিতবে এখনই তা বলা মুশকিল। কিন্তু বাম-কংগ্রেস একটা ফ্যাক্টর হয়ে যাবে। মূলত সেই দিকেই তাকিয়ে সুজন-মান্নানেরা। এ দিনের ধর্মঘটের সাফল্য তারই ইঙ্গিত।

(মতামত ব্যক্তিগত। লেখাটি লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া)