শালিনী ভট্টাচার্য
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একঘেঁয়েমি ছন্দের মধ্যে সুখ জিনিসটা যেন চাপা পড়ে যায়। উৎসবের ফুরফুরে দিনগুলি এই ভুলে যাওয়া সুখের অনুভূতিকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে। সদ্য অতিক্রান্ত সরস্বতী পুজোর দিন আলো ঝলমলে কাঁচা, নবীন মুখগুলি দেখে একপশলা টাটকা হাওয়ার মতো মনে সুখের অনুভব বোধ করলাম।
দীর্ঘ প্রায় একবছর পর স্কুল খুলেছে। খুব ছোটরা না পেলেও নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছাত্রীরা পেয়েছে প্রতিদিন স্কুল প্রবেশের অধিকার। কয়েকদিন স্কুল করার পরেই সরস্বতী পুজো। কোভিডাসুরকে পরাজিত করে দেবীর আরাধনায় ছোট, বড় সবাই আবার একজোট। বাবা, মা বা বন্ধুদের সঙ্গে দলবেঁধে ঠাকুর দেখতে বেরানো মুখগুলো তাই অন্য বারের থেকেও যেন বেশি আনন্দোচ্ছ্বল। দিদিমণি, স্যরেদের কাছেও এ বারের পুজো ব্যতিক্রমী।
বেশিরভাগ বিদ্যালয়েই সব ছাত্রছাত্রীকে পুজোর কাজে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিদ্যালয়ে আসতেও নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা বাধা মানেনি। অভিভাবক বা বন্ধুদের সঙ্গে নিছক দর্শক হিসেবে প্রতিমা দর্শনের জন্য পুজোর সময় বা সন্ধ্যারতির সময় বিদ্যালয়ে এসে উপস্থিত হয়েছে। বহুদিন পরে প্রিয় শিক্ষক শিক্ষিকাদের দেখে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে ছুটে এসেছে তাঁদের দিকে। বলা বাহুল্য, শিক্ষক-শিক্ষিকারাও একই রকম উৎসাহের সঙ্গে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
সরস্বতী পুজোর দিন ধুতি-পাঞ্জাবি, শাড়ি পরা কচি কচি মানুষগুলো যেন আরও একবার জীবনের প্রতি বিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়ে গেল। অতিমারি যতই প্রবল হোক, মানুষ তাকে জয় করবেই। প্রাণের জোয়ারে ভেসে যাবে সকল কলুষতা। সরস্বতী পুজোর দিনটি যেন আরও প্রাঞ্জল ভাবে বিষয়টা আমাদের মনে করিয়ে দিল। যত দীর্ঘ হোক না কেন বিচ্ছেদের কাল, ছাত্রছাত্রীদের মনে তার প্রিয় বিদ্যালয়ের ছবি আজও অমলিন। সরস্বতী পুজোর দিন কয়েক মুহূর্তের জন্য হলেও বাবা, মা, দাদা, দিদির হাত ধরে স্কুলে হাজির হয়ে ছাত্রছাত্রীরা সেই কথাটাই প্রমাণ করে দিল।
(ফিচার ছবি গুগল থেকে নেওয়া)