শুভদীপ ভট্টাচার্য ● বহরমপুর
ঘড়ির কাঁটা তখন তিনটের ঘর ছুঁইছুঁই করছে। মঞ্চে বক্তৃতা দিচ্ছেন রানিনগরের বিধায়ক ফিরোজা বেগম। মঞ্চের সামনে থিকথিকে ভিড়। সেই ভিড় থেকে কখনও সুর করে বলা হচ্ছে, ‘খেলা হবে… খেলা হবে…।’ কখনও আবার সমস্বরে গর্জে উঠছে জনতা, ‘অধীর চৌধুরী জিন্দাবাদ…।’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী মঞ্চে ওঠার ঠিক পরেই ভিড়ের মধ্যেই শোনা গেল দু’জনের ফিসফাস, ‘‘কী রে, মধু কখন আসবে।’’ পাশ থেকে একজন উত্তর দিল, ‘‘আসবে, আসবে। সব সেটিং হয়ে আছে।’’ হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে থেকে আওয়াজ উঠল—‘মোশারফ হোসেন জিন্দাবাদ…. মধু ভাই জিন্দাবাদ…।’
মঞ্চে বসে থাকা অধীর চৌধুরী সেই গর্জে ওঠা ভিড়ের দিকে তাকালেন বটে, কিন্তু মাস্কের সৌজন্যে তাঁর মুখের অভিব্যক্তি ধরা পড়ল না। মঞ্চের দিকে তাক করা ক্যামেরাগুলো চকিতে ঘুরে গেল জনতার দিকে। সেই ভিড় ঠেলে মঞ্চের দিকে এগিয়ে গেলেন মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডল (মধু)। মঞ্চের মাইক থেকে তখন ভেসে আসছে, ‘স্বাগতম…স্বাগতম…মোশারফ হোসেন স্বাগতম…।’
মধু মঞ্চে উঠতেই এগিয়ে এলেন অধীর চৌধুরী। দু’জনের মুখেই তখন চওড়া হাসি। বরণ-পর্ব শেষ হতেই দু’জনেই গিয়ে বসলেন। একেবারে পাশাপাশি। ভিড়ের মধ্যে ফের শুরু হল ফিসফাস, ‘‘এতদিনে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরল গো।’’ শুক্রবার দুপুর থেকেই এমন নানা মুহূর্তের সাক্ষী থাকল বহরমপুর টেক্সটাইল মোড়।
মধু যে তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যাচ্ছেন তা জেনে গিয়েছিলেন জেলার প্রায় সকলেই। আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগদানটা ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। এ দিন মধুর কংগ্রেসে যোগদান নিয়ে অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘যাঁরা কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছেন তাঁদের সকলেরই দেহটা আছে ওখানে, মন রয়েছে কংগ্রেসেই। আজ আমি এই কারণে খুশি যে, শুধু মধু বা সাবিনা ইয়াসমিন নন, যাঁরা তাঁদের নেতা বানিয়েছেন সেই কারিগরেরাও আমাদের সঙ্গে শামিল হয়েছেন।’’
এ ভাবেও তা হলে ফিরে আসা যায়? পায়ে স্নিকার্স, পরনে ফেডেড জিন্স আর সাদা পাঞ্জাবির উপরে কালো জওহর কোট পরে মোশারফ হাসছেন। তারপরেই তিনি হাতে তুলে নিলেন মাইক্রোফোন। মঞ্চের সামনের ভিড়ের উদ্দেশে তিনি বললেন, ‘‘আপনাদের মতো লোকজন না থাকলে আমি কংগ্রেসে ফিরে আসতে পারতাম না। এটা আপনাদের ভালবাসা।’’ করতালির আওয়াজ থিতু হওয়ার অপেক্ষায় কয়েক সেকেন্ড থামতে হল মধুকে। তারপরে তিনি ফের শুরু করলেন, ‘‘আজ থেকে ব্যাট হাতে খেলতে নামলাম। আমার কোচ অধীর চৌধুরী।’’
শেষ বিকেলে মঞ্চের সামনে থেকে ফের আওয়াজ উঠল— খেলা হবে… খেলা হবে…