কল্লোল প্রামাণিক ● করিমপুর
জমজমাট বিয়েবাড়ি। আলোর রোশনাই। খুদেদের খিলখিল। বড়দের ব্যস্ততা।
কেউ একজন বললেন, ‘‘কী রে, বর কখন আসবে? একটা ফোন-টোন করে খোঁজ নে।’’ কারও সরস মন্তব্য, ‘‘ও বাবা, তোদের যে দেখছি তর সইছে না!’’ কারও উদ্বেগ, ‘‘বরযাত্রীদের টিফিনগুলো কোথায় যে রেখেছে!’’ ওদিকে সানাইয়ে বুঁদ বিসমিল্লা খান।
আচমকাই ছন্দপতন!
সোমবার সন্ধ্যায় করিমপুরের নাটনায় বর-বরযাত্রী আসার আগেই বাড়ির সামনে এসে থামল পুলিশের গাড়ি। কী ব্যপার? পাত্রী সাবালিকা। অন্য কোনও গন্ডগোল নেই। তা হলে? গম্ভীরমুখে এক পুলিশকর্মীই উত্তর দিলেন, ‘‘পাত্রীর এক আত্মীয়ের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট এসেছে। পজ়িটিভ।’’
মুহূর্তের মধ্যেই বদলে গেল বিয়েবাড়ির চেনা পরিবেশ। এক এক করে বাড়িতে ঢোকেন পিপিই কিট পরা স্বাস্থ্যকর্মী ও করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার মণীষা মণ্ডল। ততক্ষণে বিয়েবাড়ির সকলেই জেনে গিয়েছেন, শুক্রবার পাত্রীর এক আত্মীয় সদ্য বিদেশ থেকে ফিরেছেন। কলকাতা বিমান বন্দরে তাঁর করোনা পরীক্ষা হয়। সোমবার তাঁর রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’ আসে।
করিমপুর ১ বিডিও অনুপম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের লোকজন ওই বাড়িতে পৌঁছে যান। বিয়েবাড়িতে উপস্থিত পাত্র-পাত্রী-সহ ১৭২ জনের লালারস সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।’’ করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার মণীষা মণ্ডল বলছেন, ‘‘আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি। আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য ওই রাতেই বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’’
এ দিকে ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে রয়েছেন বিয়েবাড়ির লোকজন ও বিয়েতে আসা অতিথিরা। তাঁদের একজনের কথায়, ‘‘বিয়েবাড়ির ভিড়ে বয়স্ক ও বাচ্চারাও ছিল। এখন কী হবে, বুঝতে পারছি না।’’ আর একজনের কথায়, ‘‘এত কিছুর পরেও এমন ঢিলেঢালা মনোভাব কেন? বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল, বিদেশ থেকে আসা ওই যুবককে কোয়রান্টিনে পাঠানো। সেটা না করে তাঁরা বাড়ি আসার ছাড়পত্র দিলেন কী ভাবে?’’
বিয়েবাড়িতে আসা এক অতিথির কথায়, ‘‘গত এক বছর ধরে করোনার ভয়ে বাড়ি থেকে বের হইনি। আনলক পর্বের পরে এ বারই প্রথম কোনও নেমতন্ন বাড়িতে এসেছিলাম। এখানেও যে এ ভাবে বিপদে পড়তে হবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, ঘটনার পরে কোনওরকমে বিয়ে-পর্ব মেটে। পাশের বাড়িতেই সিঁদুরদান হয়। বিয়েবাড়ির কথা শুনে বরযাত্রীদের কেউ বাস থেকেও নামেননি। তাঁদের একজনের কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম, বন্ধুর বিয়েতে বেশ আনন্দ করব। কিন্তু করোনার ভয়ে বাস থেকেই তো নামতে পারলাম না!’’ মঙ্গলবার সকালে স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা গিয়ে বিয়েবাড়ি ও লাগোয়া এলাকা স্যানিটাইজড করেন।