রাজা বাগচী ● বহরমপুর
চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই বদলে গেল ছবিটা! বৃহস্পতিবারে যে এলাকায় ভূতের গুজব ছড়িয়েছিল, শুক্রবার বহরমপুরের সেই কান্তনগর নতুনপাড়ার বহু বাসিন্দাই এখন বলছেন— ‘ভূত-টূত সব বাজে কথা। গুজব। এবং গুজবে কান দিতে নেই।’
আর যে বাড়িতে ভূতে ঠকঠক করে দরজা ধাক্কা দিচ্ছিল এবং খিকখিক করে হাসছিল বলে জানিয়েছিলেন অনেকে, সেই বাড়ির মালিক এ দিন বলছেন, ‘‘এ সব অপপ্রচার। বাড়িতে বাস্তুদোষ কাটাতেই পুজো-পাঠের আয়োজন করা হয়েছিল।’’
বৃহস্পতিবার কান্তনগরের নতুন পাড়ার বাসিন্দাদের একাংশ দাবি করেন, ‘‘ওই পরিবারের লোকজন তাঁদের জানিয়েছিলেন বাড়িতে ভূতে দৌরাত্ম্য করে। আর সেই কারণেই ক’দিন পুজো ও যজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছিল। ভূতের ভয়েই সপরিবার বাড়ি ছেড়ে চলে যান বাড়ির মালিক। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তাঁদের খোঁজও পাওয়া যাচ্ছিল না।’’ পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, ঘটনাস্থলে ছুটে আসতে হয় পুলিশকেও।
বৃহস্পতিবার ঘটনার কথা শুনেই মানুষের অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার ও সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যেরা। শুক্রবার ওই বাড়িতে যান পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের মুর্শিদাবাদ জেলা শাখার সদস্যেরা। সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা ওই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, এলাকার কিছু মানুষ এই অপপ্রচার করেছেন। এ সব বিষয় নিয়ে কেউ যাতে গুজব না ছড়ান সে ব্যাপারে এলাকার মানুষকে আমরা সচেতন করেছি। আর বাস্তুদোষ বলেও যে কিছু হয় না সে কথাও ওই পরিবারের লোকজনকে বোঝানো হয়েছে।’’
আর ওই বাড়ির মালিক বলছেন, ‘‘এর আগে আমরা জমজমাট এলাকায় থাকতাম। এখানে নতুন এসেছি। এলাকাটা তুলনামূলক ভাবে বেশ ফাঁকা। আমার স্ত্রী স্নায়ুর সমস্যাতেও ভুগছেন। সেই কারণেও হয়তো তিনি ভয় পেয়েছেন। আমরা চিকিৎসকের পরামর্শও নেব।’’ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘স্নায়ুর সমস্যা থাকলে এমনটা হতেই পারে। তবে চিকিৎসায় আরোগ্যলাভ সম্ভব।’’
ওই বাড়ির মালিক বলছেন, ‘‘বুধবার রাতে আমাদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কিছু লোকজন বিশেষ উদ্দেশ্যে এ সব ভূতের গল্প রটিয়েছেন।’’ কী সেই উদ্দেশ্য? ওই বাড়ির মালিকের দাবি, ‘‘আমি যে বাড়িটা কিনেছি সেখানে কিছু লোকজনের অন্য পরিকল্পনা ছিল। সেটা বাস্তবায়িত না হওয়ায় আমার উপরে রাগ ছিল। সেই আক্রোশ থেকেই ভূতের গল্প ফেঁদে বাড়িটার দুর্নাম করা হচ্ছে।’’