কল্লোল প্রামাণিক ও দেবপ্রসাদ সান্যাল

থমকে আছে চাকা!
আর এই তিনটি শব্দ যে কতটা ভারী তা প্রতি মুহূর্তে টের পাচ্ছেন পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা লোকজন। করোনার জেরে রাজ্য জুড়ে জারি হয়েছে বিধি-নিষেধ। দোকান, হাট-বাজার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খোলা থাকছে। কিন্তু জরুরি পরিষেবা ছাড়া পণ্য পরিবহণ ও যাত্রী পরিবহণ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় চরম আর্থিক সমস্যায় পড়েছেন ট্রাক ও বাসের কর্মী ও মালিকরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, করোনার জেরে গত প্রায় দু’সপ্তাহ আগে থেকে রাজ্য জুড়ে বিধি-নিষেধ চলছে। আপাতত ১৫ জুন পর্যন্ত এমনটাই চলবে। তারপরে কী হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সকলেই।
রাজ্য বেসরকারি বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ‘দিদি আমাদের বাঁচান’ লেখা পোস্টার তৈরি করা হয়েছে। সেই পোস্টার সাঁটানো হয়েছে বাসেও। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপনারায়ন বসু জানান, “সংক্রমণের কারণে সরকারি সবরকম বিধি-নিষেধ আমরাও মেনে চলছি। প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতাও করছি। কিন্তু এই অবস্থা কতদিন চলবে, বুঝতে পারছি না। এ দিকে পেট্রোল-ডিজেলের দাম নব্বই টাকা ছুঁইছুঁই। এই অবস্থায় বাস মালিক ও বাসের কর্মীরা কী করে বাঁচবেন? মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি পৌঁছে দিতেই রাজ্যের সমস্ত জায়গায় ‘দিদি আমাদের বাঁচান’ লেখা পোস্টার ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দিদিই বিচার করুন, আমরা কী করে বাঁচব?”
বহরমপুর-কলকাতা রুটের বাসকর্মী করিমপুরের ভাস্কর বিশ্বাস জানান, গতবারের লকডাউনেও খুব সমস্যায় পড়লেও কোনও সরকারি সাহায্য মেলেনি। এ বছর আবার কাজ বন্ধ থাকায় বাড়িতে বসে দিন কাটাতে হচ্ছে। বাসের চাকা না ঘুরলে সংসারের চাকা ঘুরবে কী করে? সরকারের নির্দেশ মেনে যেমন বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে, তেমনই বাসকর্মীদের বিষয়টাও সরকারের দেখা উচিত। তাঁর কথায়, “দীর্ঘদিন বাসে কাজ করার ফলে অন্য কোনও কাজ করার অভ্যাস চলে গিয়েছে। বাড়িতে এত অনটনের মধ্যেও এই সময় অন্য কাজেও যেতে পারছি না।”
আর এক বাসকর্মী সন্তু স্বর্ণকার জানাচ্ছেন, করিমপুর-কৃষ্ণনগর ও করিমপুর-বহরমপুর রুটের বাসে প্রায় এক হাজার কর্মী কাজ করেন। এই সময়ে সকলেই কাজ হারিয়েছেন। তবে ভিন রাজ্যের কাজ থেকে এখানকার অনেক শ্রমিক যেমন বাড়ি ফিরছেন, তেমনই এলাকার কিছু শ্রমিক বাইরে কাজে যাচ্ছেন। তাঁদের কলকাতা, হাওড়ায় পৌঁছে দেওয়া এবং সেখান থেকে শ্রমিকদের বাড়ি ফিরিয়ে আনার জন্য কয়েকটি বাস পুলিস প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মাঝে মাঝে যাতায়াত করছে। তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার নদিয়ার করিমপুর বা লাগোয়া মুর্শিদাবাদের ডোমকল এলাকা থেকে প্রায় পাঁচটি বাস ভাড়া করে কলকাতায় গিয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন সেই ভাড়া হচ্ছে না। ফলে এই পরিস্থিতিতে হাতেগোনা কিছু বাসকর্মীর অনিয়মিত আয় হলেও বাকিরা খুব কষ্টের মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন।”
করিমপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতি সুবোধ রায় বলছেন, ‘‘বাস বন্ধ থাকায় বাস মালিকদেরও কোন আয় নেই। কাজ না থাকায় বাসের কর্মীরা সত্যিই খুব সমস্যায় পড়েছেন। করিমপুর থেকে কৃষ্ণনগর রুটে প্রতিদিন গড়ে ১৬৫টি ও বহরমপুর রুটে প্রায় ১২৫টি যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। এতগুলো বাসের কর্মী কাজ হারিয়েছেন। বাসমালিকদের অনেকেই তাঁদের সাহায্য করছেন। কিন্তু এ ভাবে আর কতদিন চলবে, জানি না।’’