কল্লোল প্রামাণিক
চৈতি হাওয়ার সঙ্গে লেপ্টে থাকে ভয়ও। কারণ, সেই হাওয়া বার্তা বয়ে আনে— দুয়ারে পরীক্ষা!
প্রথমে মাধ্যমিক, তারপরে উচ্চ মাধ্যমিক। পরীক্ষার্থীরা দুরুদুরু বুকেই চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়। সবকিছু ভাল ভাবে মিটলে স্বস্তির শ্বাস ফেলেন শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক, পড়ুয়া সকলেই। তবে গত বছরের করোনার পর থেকে হোঁচট খাচ্ছে এই চেনা ছন্দটা।
আগে ভয় ছিল পরীক্ষার। এখন ভয়— পরীক্ষাটা আদৌ হবে তো? দোসর হয়েছে দুশ্চিন্তার প্রশ্নমালা—যদিও বা পরীক্ষাটা হয়, কবে হবে? কী ভাবে হবে? কেমন করে হবে প্রকৃত মূল্যায়ন? ক্ষুব্ধ এক অভিভাবক যেমন বলেই ফেললেন, ‘‘কয়েক কোটি ভোটার ভোট দিয়ে ফেললেন। আর কয়েক লক্ষ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না?’’
সাধারণত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু অতিমারির কারণে এ বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা এখনও হয়নি। আর এই পরীক্ষা নিয়েই দুশ্চিন্তায় আছেন অভিভাবক, শিক্ষক, পরীক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হওয়া মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণের জেরে উচ্চ মাধ্যমিকেরও সব পরীক্ষা হয়নি। তারমধ্যেই দেশজুড়েই শুরু হয়েছিল লকডাউন। যে বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছিল তার প্রাপ্ত নম্বরের গড় করে ফলপ্রকাশ হয়েছিল। নতুন ক্লাসে ভর্তির পরে কিছু কিছু স্কুলে অনলাইন ক্লাস চালু হয়। তবে তাতে খুব সন্তুষ্ট হতে পারেননি অনেকেই।
করিমপুরের এক শিক্ষক বলছেন, ‘‘করোনার প্রকোপ কমলে জানুয়ারিতে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়। তবে অন্যদের ক্লাস আজও বন্ধ। ভোটের কারণে মার্চ মাস থেকে ফের স্কুলের পঠনপাঠন থমকে যায়। কিছুদিন আগে জানতে পারি, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নিজেদের স্কুলে হবে। আর মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে সিলেবাস কমিয়ে অর্ধেক নম্বরের (৪৫) পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সবটাই অনিশ্চিত।’’
এক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর কথায়, ‘‘পরীক্ষা নিয়ে একটা ভয়, টেনশন তো থাকেই। এ বার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে চরম অনিশ্চয়তা, দুশ্চিন্তা। গত প্রায় পনেরো মাস স্কুলের পড়াশোনা বন্ধ। একাদশ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে ওঠার সময় করোনার জন্য সব পরীক্ষা হয়নি। দ্বাদশ শ্রেণিতে স্কুলের ক্লাস যেমন বন্ধ তেমনি টিউশন নেওয়া বা অনলাইন ক্লাস সবসময় করতে পারিনি। সরকারের উচিত করোনাবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়া। গড় নম্বর দিয়ে পড়ুয়াদের সঠিক মেধা বিচার করা সম্ভব নয়। আমরা চাই, পরীক্ষা হোক।”
শিক্ষক ও অভিভাবকদের একাংশ জানাচ্ছেন, কোভিড পরিস্থিতিতে যদি রাজ্যে প্রায় ছ’কোটি মানুষের ভোটের ব্যবস্থা করা যায়, তা হলে পরীক্ষা নেওয়া কঠিন নয়। তাছাড়া বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকেরা চাইছেন, পরীক্ষা হোক। নিজের স্কুলে পরীক্ষার ব্যবস্থা করলে কোনও সমস্যা হবে না। কারণ, প্রতি স্কুলে গড়ে একশো থেকে দেড়শো পরীক্ষার্থী রয়েছে। করোনাবিধি মেনে প্রতি ঘরে দশ জন করে পরীক্ষার্থী বসিয়ে পরীক্ষা নেওয়াই যায়। সীমান্তবর্তী একটি স্কুলের প্রধানশিক্ষক বলছেন, ‘‘স্কুলে পরীক্ষা নেওয়া হলে আমাদের কোনও সমস্যা হবে না। ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকেরা প্রতিদিন ফোন করে আমাদের কাছে পরীক্ষার খোঁজ খবর নেন। কিন্তু আমরা তাঁদের কোনও সদুত্তর দিতে পারছি না।”
(ফিচার ছবি গুগল থেকে নেওয়া)