নিজস্ব প্রতিবেদন

জলঙ্গি নদীর পাড় থেকে বাঁ দিকে সরু গলিটা ধরে কিছুটা এগিয়ে গেলেই থমকে দাঁড়াতে হয়। গলির শেষে রয়েছে পেল্লাই একটা বাঁশের দরজা। দরজার কড়া নাড়তেই বেরিয়ে এলেন বছর একান্নর সদানন্দ সরকার। ফালি উঠোনে ছড়িয়ে রয়েছে নানা রকমের যন্ত্রপাতি, বাঁশ ও বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র।
সে সবের ভিড় ঠেলে সদানন্দের ঘরে ঢুকতেই মুখ থেকে আপনা-আপনিই বেরিয়ে এল— আরিব্বাস! সে ঘরের সিঁড়ির হাতল থেকে খাট, টেবিল, চেয়ার, দরজা, সোফা, আরামকেদারা, টুল, বইয়ের সেল্ফ, ফুলদানি সবই বাঁশের তৈরি। সদানন্দ বলছেন, ‘‘বাঁশ দিয়ে একটা আস্ত বাড়ি বানানোর ইচ্ছে রয়েছে।’’
করিমপুর থানার অভয়পুরের এই বাসিন্দাকে এখন একনামেই চেনে তামাম এলাকা। বাঁশের প্রতি সদানন্দের প্রেম ছেলেবেলা থেকেই। তাঁর বাবাও বাঁশ দিয়ে কিছু কিছু জিনিসপত্র তৈরি করতেন। তবে জীবন ও জীবিকার তাগিদে সদানন্দ প্রথমে কাজ শুরু করেন স্বর্ণশিল্পী হিসেবে। পরে নন্দনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। দিনভর সব কাজ শেষ করেও তিনি ক্লান্ত হতেন না। বাড়িতে এসে সটান বসে পড়তেন বাঁশ নিয়ে।
প্রথমে শখ করে নিজের জন্যই কিছু কিছু জিনিসপত্র তৈরি করতেন সদানন্দ। ধীরে ধীরে তাঁর এই হাতের গুণের কথা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে। আসতে শুরু করে বায়নাও। গত কয়েক বছর ধরে সদানন্দ হস্তশিল্পের মেলায় যান। সরকারের তরফে হস্তশিল্পীর মর্যাদাও পেয়েছেন। এখন তাঁর বাড়িটাই ছোটখাটো একটা কারখানা হয়ে উঠেছে। বাঁশ পচানো থেকে শুরু করে তৈরি করা জিনিসপত্রের ফিনিশিং টাচ দেওয়া সবটাই তিনি বাড়িতে বসেই করেন।
সদানন্দের এই কাজে সাহায্য করেন তাঁর স্ত্রী পবিত্রা সরকারও। সদানন্দ বলছিলেন, ‘‘বাঁশ আমাদের এলাকায় সহজলভ্য। দেশে-বিদেশে বাঁশের তৈরি আসবাবের ভাল বাজার রয়েছে। এই শিল্পে প্রচুর কর্মসংস্থানেরও সুযোগ রয়েছে। তবে ব্যাঙ্ক থেকে কোনওরকম ঋণ দিতে চায় না। সেটা পেলে আরও ভাল ভাবে কাজটা করা যেত।’’
কথা বলতে বলতে ফের কাজে মন দেন সদানন্দ। ছেনি, হাতুড়ির ঠোকাঠুকিতে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে সবুজ-স্বপ্ন।