নিজস্ব প্রতিবেদন

এ যেন অনেকটা সুকুমার রায়ের সেই ‘ছিল রুমাল, হয়ে গেল বিড়াল’-এর মতো অবস্থা!
শিলান্যাস যখন হল তখন শিলালিপি ছিল একরকম, তার কিছুক্ষণ পরে স্থান একই থাকল। বদলে গেল শুধু কাল, পাত্র, শিলা এবং শিলালিপি! মঙ্গলবার বিকেল থেকে যা নিয়ে রীতিমতো হইচই শুরু হল করিমপুরে। ব্যস্ত হয়ে পড়ল পুলিশ। এবং রীতিমতো অবাক হয়ে করিমপুর জানতে পারল, ‘‘এমনটাও হয়, হতে পারে!’’
পুলিশ জানিয়েছে, ‘উধাও’ হয়ে যাওয়া শিলা এবং শিলালিপি দুই-ই খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। এই ঘটনার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা তদন্ত করে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যা শুনে করিমপুরের এক প্রবীণ বলছেন, ‘‘গত কয়েক দশকে এই প্রান্তিক জনপদে রাজনৈতিক আকচাআকচি তো বড় কম দেখিনি। কিন্তু শিলান্যাসের শিলা-বদল! নাহ্, এমনটা অন্তত মনে পড়ছে না।’’
এ দিন, করিমপুরের ‘পিডব্লিউডি’ এলাকায় একটি অডিটোরিয়ামের শিল্যান্যাসের অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন করিমপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র, মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের, নদিয়ার জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠি-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। সেখানে উপস্থিত ব্যক্তিদের একাংশ জানিয়েছেন, এ দিন অনুষ্ঠান শুরুতেই কিঞ্চিৎ হলেও ‘হোঁচট’ খেয়েছিল। অনুষ্ঠানের আগেই মঞ্চের পিছনে একটি ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছিল। কিছুক্ষণ পরে মঞ্চে উপস্থিত অনেকের সামনেই তৃণমূলের কিছু কর্মী সেই ফ্লেক্সের উপরে আরও একটি ফ্লেক্স টাঙিয়ে দেন। তখনকার মতো বিষয়টি নিয়ে তেমন ‘উচ্চবাচ্য’ হয়নি। যে যাঁর মতো বক্তব্য দিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে যান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, অডিটোরিয়ামের শিলান্যাসের পরে ছিল করিমপুর হাসপাতালের পিএসএ-অক্সিজেন প্ল্যান্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। গোল শুরু হয় তার পরেই। হঠাৎ করে কিছু লোকজন দেখতে পান, অডিটোরিয়ামের জন্য যে শিলান্যাস হয়েছিল সেই শিলা এবং শিলালিপি উধাও। তার পরিবর্তে যা রয়েছে তার সঙ্গে আগের শিলালিপির মিল নেই। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসে পুলিশ। শুরু হয় হইচই।
করিমপুরের বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহ রায় বলছেন, ‘‘ফ্লেক্স ও ফলক নিয়ে সামান্য কিছু সমস্যা হয়েছিল। আমরা সবাই তৃণমূলের সৈনিক। দলে কোনও মতবিরোধ থাকলেও তা মিটিয়ে নেওয়া হবে। তবে এমন ঘটনা কাম্য নয়।’’ মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের খান বলেন, ‘‘এলাকার সাংসদ হিসেবে আমাকে ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমি গিয়েওছিলাম। কিন্তু ফলক ও ফ্লেক্সে আমার নাম ও ছবি না থাকায় কর্মীদের একাংশ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু সরকারি আধিকারিকদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি মিটে যায়। তার পরে কী হয়েছে আমি আর জানি না।’’
আর কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ওই অনুষ্ঠানের পরেই আমি জেলাশাসকের সঙ্গে বেরিয়ে এসেছিলাম। কারণ, তারপরে আরও তিনটে সরকারি অনুষ্ঠান ছিল। তারমধ্যেই কেউ একজন আমাকে ফোন করেছিল। বিষয়টি নিয়ে পিডব্লিউ-এর তরফে অভিযোগ জানানো হয়েছে। আমি যতদূর জানি, ওটা পাওয়াও গিয়েছে। বাকিটা পুলিশ দেখছে।’’