নিজস্ব প্রতিবেদন

নজরদারি চৌকিতে বিএসএফ ছিল। কড়া নজরদারি ছিল। কাঁটাতারের অস্থায়ী বেড়া ছিল। আলো? হ্যাঁ, তা-ও ছিল। কিন্তু হোগলবেড়িয়া থানার কাছারিপাড়া সীমান্তে বিএসএফের এক কর্তা বলছেন, ‘‘ভাগ্যিস সিসি-ক্যামেরা ছিল!’’
বিএসএফের ওই কর্তার সংযোজন, ‘‘আর সেই ক্যামেরার চোখেই ধরা পড়েছে— একজন, দু’জন করে ১৯ জন অনুপ্রবেশকারী ঢুকে পড়েছে ভারতে।’’ যে ঘটনা জানাজানি হতেই হইচই শুরু হয়েছে বিএসএফের অন্দরে। আন্তর্জাতিক সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
বিএসএফের দাবি, হোগলবেড়িয়া থানায় তারা বিষয়টি লিখিত ভাবে জানিয়েছে। যদিও নদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কৃশানু রায় বলছেন, ‘‘পুরো ঘটনাটিই ঘটেছে একেবারে সীমান্ত এলাকায়। বিএসএফের তরফে এখনও পর্যন্ত পুলিশের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তবে বিএসএফের কাছে সে দিন রাতের সিসি-ক্যামেরার ফুটেজ চাওয়া হয়েছে। সেই ফুটেজ ও অভিযোগ পেলেই আমরা তদন্ত শুরু করব।’’
বিএসএফ সূত্রের খবর, অন্য দিনের মতো শনিবারেও (২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১) সীমান্তে নজরদারি চালাচ্ছিল বিএসএফের সিসি-ক্যামেরা। সেই ক্যামেরা জানান দিচ্ছে, রাত তখন সাড়ে ১০টা। সেই সময় কাছারিপাড়ার অস্থায়ী তারকাঁটার ওপারে প্রথমে দু’-একজনকে দেখতে পাওয়া যায়। তারপরে পিলপিল করে সেই তার পেরিয়ে ঢুকে পড়ে ১৯ জন!
বিএসএফের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘ঘটনাটি কর্তব্যরত বিএসএফ জওয়ানদের নজর এড়িয়ে গেলেও সিসি-ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। সিসি-ক্যামেরা না থাকলে বিষয়টি জানাই যেত না। এখন এই ১৯ জন কী উদ্দেশ্যে ভারতে ঢুকেছে, বর্তমানে তারা কোথায় আছে, আমাদের দেশের কারা ওদের সহযোগিতা করছে— এ সব নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশের ঘটনা এই প্রথম নয়। কখনও চিকিৎসা কিংবা কাজের জন্য, কখনও চোরাপথে গাঁজা, কাশির সিরাপ কিংবা গবাদি পশু পাচারের জন্য বাংলাদেশ থেকে অনেকেই সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে আসে। সবসময় শেষরক্ষাও হয় না। অনুপ্রবেশের সময় অনেকেই ধরা পড়ে যায় বিএসএফের হাতে। তবে একসঙ্গে এই ১৯ জন কী উদ্দেশ্যে ভারতে ঢুকেছে তা পুলিশ এবং বিএসএফের কাছে এখনও স্পষ্ট নয়। আর এটাই এখন সবচেয়ে মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএসএফের।
সীমান্তের প্রবীণ বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, এর আগে বহু অনুপ্রবেশকারী এ দেশে ঢুকে পড়েছে। প্রথমে বোঝা যায়নি। পরে তাঁদের নানা অপকর্মের পরে বিষয়টি জানাজানি হয়। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে নিহত শাকিল আহমেদ আদপে ছিল বাংলাদেশের বাসিন্দা। করিমপুরের বারবাকপুরে বিয়ে করে শ্বশুরকে বাবা পরিচয় দিয়ে তৈরি করে ফেলে ভোটার কার্ড! আবার সুব্রত বাইনও (যে করিমপুর এলাকায় ‘মামা’ বলেই পরিচিত ছিল) একই ভাবে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে এসেছিল। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বেশ কিছু অভিযোগে পুলিশ তাঁকে কলকাতার পাম অ্যাভিনিউ থেকে গ্রেফতার করে।

(ফিচার ছবি প্রতীকী)