অশোক মজুমদার

ভি ফর ভিকট্রি। ভি ফর ভবানীপুর। কিন্তু দু’আঙুলের ভি নয়। তিন আঙুলের জয়ের এক নতুন ট্রেন্ড।
‘‘আমি তো একা জিতিনি। আমার সাথে আরও দু’জন জিতেছে। তাদের কথাও বলতে হবে। তাই ভিকট্রির দুই আঙুল নয়, তিন আঙুল”, সাংবাদিকদের ভিকট্রি সাইন দেখানোর আবদারে দিদির তাৎক্ষণিক এই অভিনব প্রতিক্রিয়াটি দেখে আবারও ওঁর প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা ঝোঁকালাম। দিদিই পারেন। ট্রেন্ড তৈরি করতে। আবার সেই ট্রেন্ড ভাঙতে।
গত ২ মে, তামাম দেশের নজর ছিল এ বারের বাংলার নির্বাচনী ফলাফলে। বাংলার ইতিহাসে কুখ্যাত ভোট বলে খ্যাত হয়ে থাকবে গত একুশের নির্বাচন। বাংলা দখলের লক্ষ্যে কেন্দ্রের শাসকদলের ‘সাম দাম দণ্ড ভেদ’ নীতির নির্লজ্জ প্রয়োগের এমন উদাহরণ অতীতে বাংলা তো দূর, দেশের কোনও রাজ্যেই দেখেনি। কিন্তু ইভিএম খুলতেই শুধু দেশ নয়, গোটা বিশ্ব দেখলো, দিদি ঠিক কী ঘটিয়েছেন! এগারো-ষোলো-একুশ…. এখানেও সেই ট্রেন্ড ভাঙারই খেলা।

ভবানীপুরের নির্বাচন কিন্তু শুধু দিদির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছিল না। এই নির্বাচন ছিল ব্যক্তি মমতার রাজ্যের গণ্ডী ছাপিয়ে দেশের প্রতি বার্তার। ফলত এই জয় সেই বার্তাকেই দিকে দিকে ছড়িয়ে দিয়ে চব্বিশের দামামা বাজার প্রস্তুতি সম্পন্ন করল। ভবানীপুর থেকেই শুরু হল ভারতজয়ের ডাক। চব্বিশের আন্দোলনের সুতোর ধরতাইটা দিদির হাত ধরেই সূচনা হল। ভ-এ ভবানীপুর, আর ভ-এ ভারতের স্লোগানই শেষকথা বলবে কিনা, তা সময়ই বলবে। কিন্তু নিজেদের এক এবং অদ্বিতীয় ভাবতে শুরু করা মোদী-শাহের সামনে প্রতিপক্ষ হিসেবে যিনি উঠে এসেছেন তিনি যে কতটা শক্তিশালী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

ফিনিক্স পাখির মতো সমস্ত কুৎসা, অপপ্রচারকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিদি বাংলার আকাশ থেকে আতঙ্কের কালো মেঘ সরিয়ে খুশি আনন্দ মুক্তির ঝলমলে রোদ্দুর এনে দেন বারবার। মানুষ বাদে সব এজেন্সিই তাঁকে হারিয়ে দেয়। মানুষই তাই তাঁর চালিকাশক্তি।
তবে সেদিনের বাংলা নিজের মেয়েকে দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করলেও কিন্তু দিদির ফেরা হয়নি। নন্দীগ্রাম থেকে যে যাত্রা শুরু করেছিলেন তা ভবানীপুর পূর্ণ করলো। ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরল।
এ জয় শুধু দিদির জয় নয়। এই জয় সেই আপামর মানুষের জয়। যারা দিদির কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কৃষকবন্ধু হয়ে ওঁকে আগলে রেখেছে। ওরাই দিদির শক্তি। ওরাই দিদির জীবনের জয়গান।
ভবানীপুরের নির্বাচন কিন্তু শুধু দিদির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছিল না। এই নির্বাচন ছিল ব্যক্তি মমতার রাজ্যের গণ্ডী ছাপিয়ে দেশের প্রতি বার্তার। ফলত এই জয় সেই বার্তাকেই দিকে দিকে ছড়িয়ে দিয়ে চব্বিশের দামামা বাজার প্রস্তুতি সম্পন্ন করল। ভবানীপুর থেকেই শুরু হল ভারতজয়ের ডাক।
চব্বিশের আন্দোলনের সুতোর ধরতাইটা দিদির হাত ধরেই সূচনা হল। ভ-এ ভবানীপুর, আর ভ-এ ভারতের স্লোগানই শেষকথা বলবে কিনা, তা সময়ই বলবে। কিন্তু নিজেদের এক এবং অদ্বিতীয় ভাবতে শুরু করা মোদী-শাহের সামনে প্রতিপক্ষ হিসেবে যিনি উঠে এসেছেন তিনি যে কতটা শক্তিশালী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
দিদির রাজনৈতিক পথচলা শুরুর সমসাময়িক সময়েই আমারও সাংবাদিক জীবনের শুরু। তাই দিদিকে দেখে আসছি তখন থেকেই। কী নিদারুণ সংঘর্ষ করে আজ তিনি দেশের অন্যতম বিরোধী মুখ হয়ে উঠলেন তা বিশ্বের যে কোনও অ্যাডভেঞ্চার স্টোরিকে হার মানাবে। কিন্তু দুর্দমনীয় জেদ, মানুষের প্রতি ঐকান্তিক ভালোবাসা ও সেবার মনোভাব ওঁকে বারবার খাদের কিনারা থেকে সাফল্যের মুকুট পরিয়েছে।
মানুষ আসলে বিলক্ষণ বোঝে, দিদি তাদের জন্য কী? সামাজিক ভরসার আশ্বাস তো সব নেতারাই দেয়। কিন্তু ভরসার ছত্রচ্ছায়া ক’জন হয়? ক’জন জীবন বাজি রাখতে পারে মানুষের অধিকার বুঝে নিতে। দিদি পারেন। আর পারেন বলেই দিদি আজ ভরসার বটবৃক্ষ।
কালীঘাটে দিদির বাড়ির সামনে মানুষের উচ্ছ্বাস, আবেগ দেখতে দেখতে তাই ভাবছিলাম…. একদিন যে দিল্লির ঝাঁ-চকচকে পার্লামেন্টের করিডোরে হেঁটে দিদি যাত্রা শুরু করেছিলেন, আজ সেই দিল্লিরই ডাক দিকে দিকে।
রবিবার তাই শুধুমাত্র একটি উপ-নির্বাচনের ফল বেরোলো না। এ দিনের জয়কে উৎসর্গ করেই শুরু হলো চব্বিশের জয়যাত্রা। ভবানীপুরের জয় সারা ভারতকে বার্তা দিলো লড়াইয়ের। আন্দোলনের। অধিকার রক্ষার।
খুব আনন্দের সঙ্গে ভাবতে ভালো লাগছে, একজন মানুষ, সেই কোন যুগ থেকে রাজনীতির আঙিনায় ঠোক্কর খেতে খেতে আজ ইস্পাতের মতো এতটাই ঝকঝকে যে, যাঁর সামনে যে কোনও অন্ধকারই দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে যায়। তাঁর দ্যুতিই আজ তাঁকে রাজ্যের গণ্ডী ছাড়িয়ে দেশের অলিগলি আলোকোজ্জ্বল করার ভার তুলে দিতে চায়।
আমি অন্তর থেকে চাই, এ দিনের জয়ের পরে দিদির ভারতজয়ের যাত্রাপথ সুগম হোক। কালীঘাটের অখ্যাত গলি থেকে দিল্লির রাজপথের দূরত্ব কমে যাক দেশের মানুষের আশীর্বাদে। আর ভাবীকাল লিখুক একজন সাধারণ মেয়ের জীবনের সিঁড়িভাঙা ইতিহাসের গল্প।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত। ফিচার ছবি অশোক মজুমদার)