অনির্বাণ বিশ্বাস

না, তাঁরা কেউ লটারি জেতেননি। সন্ধান পাননি কোনও গুপ্তধনেরও! কিন্তু যা ঘটেছে, তাতেই ঘুম ছুটেছে অনেকের।
কেউ বারবার পড়ে দেখছেন মোবাইলে আসা এসএমএস। কেউ কার্ড নিয়ে ছুটছেন এটিএমে। যাঁদের এটিএম কার্ড নেই, তাঁরা ভিড় করছেন ব্যাঙ্কে। কেউ তড়িঘড়ি সব টাকা তুলে নিচ্ছেন। কেউ আবার জনে জনে জিজ্ঞাসা করছেন, ‘‘আচ্ছা, ব্যাপারটা ঠিক কী?’’ কেউ আবার টাকা তুলেও খরচ করতে ভয় পাচ্ছেন, ‘‘টাকা যদি আবার ফেরত দিতে হয়!’’
ওঁদের কেউ চাষি, কেউ ভূমিহীন কৃষক, কেউ ব্যবসায়ী। দিব্যি তাঁদের দিন কাটছিল। হঠাৎ গ্রামে গ্রামে রটে গেল বার্তাটা, ‘‘ব্যাঙ্কে টাকা ঢুকেছে।’’ নিস্তরঙ্গ জীবনে কেউ যেন ঢিল ফেলল। শুরু হল ছোটাছুটি। ‘অ্যাকাউন্ট চেক’ করে জানা গেল, কথাটা মিথ্যে নয়। কিন্তু উচ্ছ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে জুড়ে বসল দুশ্চিন্তাও। সকলেরই প্রশ্ন— ‘এ কিসের টাকা?’
সম্প্রতি পিপুলবাড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দাঁড়েরমাঠ, টেপিদহ, আঙ্গারদহ, আনন্দপুর, পিপুলবাড়িয়া, ফিলিপনগর-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে। সেই টাকার পরিমাণ দুশো থেকে চল্লিশ হাজার টাকা। দাঁড়েরমাঠের এক ব্যক্তি বলছেন, ‘‘আমি তো কোথাও কোনও আবেদন করিনি। তা হলে টাকা এলো কী ভাবে, বুঝতে পারছি না। এসএমএস পড়ে যা বুঝতে পেরেছি, এটা শস্যবিমার টাকা। কিন্তু আমি তো কখনও বিমাই করিনি। তাছাড়া আমার তো ফসলের কোনও ক্ষতিও হয়নি।’’
আর একজন কখনও শস্যবিমার কথাই শোনেননি। আর একজন জানাচ্ছেন, তাঁর নিজের কোনও জমিই নেই। অথচ তাঁর অ্যাকাউন্টেও টাকা ঢুকেছে। তবে পুজোর মরসুমে টাকা পেয়ে খুশিও হয়েছেন কেউ কেউ। তাঁরা বলছেন, ‘‘টাকা যখন আমার অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে সে টাকা আমারই। এখন খরচ তো করি, পরে যা হয় দেখা যাবে।’’
স্বাভাবিক কারণেই, ব্যাঙ্ক এবং এটিএম কাউন্টারে ক’দিন থেকেই থিকথিক করছে ভিড়। কেউ ব্যস্ত টাকা তুলতে। কেউ আবার চক্ষু-কর্ণের বিবাদ মেটাতে পাশবুক আপডেট করাচ্ছেন। আর যাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকেনি? গজগজ করতে করতে তাঁদের অনেকেই বলছেন, ‘‘দেশটা এ ভাবেই রসাতলে যাচ্ছে!’’
এ ব্যাপারে পিপুলবাড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ফুলসুরত মণ্ডল বলছেন, ‘‘আমিও অনেকের মুখে বিষয়টি শুনেছি। কিন্তু বিষয়টি আমার কাছেও স্পষ্ট নয়। যাঁরা পেয়েছেন তাঁরা বলছেন শস্যবিমার টাকা। এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।’’
এ দিকে, গ্রামে কারও সঙ্গে দেখা হলেই ছিটকে আসছে, ‘‘কী রে, কত ঢুকল?’’ উত্তর নয়, ফিরে যাচ্ছে পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘তোর?’’

(ফিচার ছবি গুগল থেকে নেওয়া)