প্রসূন আচার্য

রাশিয়ার ফেলা বোমায় মঙ্গলবার খারকিভ মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ভারতীয় ছাত্র নবীন শেখারাপ্পার মৃত্যু হয়েছে। কিছু কিনতে নবীন ঘরের বাইরে বেরিয়েছিলেন। তখনই রুশ বিমান থেকে বোমা পড়ে। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিনিধি অরিন্দম বাগচী টুইট করে এই মৃত্যুর সত্যতা স্বীকার করেছেন।
ইউক্রেনে যাওয়া কয়েক হাজার ভারতীয় পড়ুয়া গত দু’দিনে উদ্ধার হলেও এখনও ১৬০০০ ভারতীয় ছাত্রছাত্রী কিয়েভ, খারকিভ-সহ বিভিন্ন শহরে আটকে আছেন। তাঁদের বড় অংশই মেডিক্যাল পড়তে গিয়েছেন। তাঁদের কী অবস্থা কেউ জানে না! আর কোনও ছাত্র আহত বা নিহত কিনা তা এখনও জানা যায়নি। রাশিয়া কিন্তু এ দিনও আকাশ আর স্থলপথে লাগাতার হামলা চালিয়ে গিয়েছে ইউক্রেনের উপরে। পোল্যান্ড বা হাঙ্গেরি সীমান্তে মাইনাস তাপমাত্রায় হাজার হাজার ভারতীয় আটকে আছেন। যাঁদের অধিকাংশই ছাত্রছাত্রী। তাঁরা হাউহাউ করে কেঁদে উদ্ধারের জন্য আবেদন করছেন মোদী সরকারের কাছে। সেই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেখা গিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী কিন্তু নিশ্চিন্তে উত্তরপ্রদেশে ভোটের প্রচারে ব্যস্ত! আর উদ্ধার কাজের দায়িত্ব নিয়ে অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বা কিরণ রিজ্জুরা ব্যস্ত দেশে ফেরা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ছবি তুলতে। মুকেশ আম্বানি, সুভাষচন্দ্র গোয়েল, অর্ণব গোস্বামী, জৈন ভাইদের টিভি চ্যানেলগুলোতে দিনরাত সেই ছবি দেখানো হচ্ছে। যদি তাতে বিজেপির ভোট বাড়ে!
ইউক্রেনে পড়তে যাওয়া এই উচ্চবিত্ত ছাত্রছাত্রী ও পরিবারের লোকেরা, যাঁরা মূলত মোদীর ভোটার, তাঁদের কাছে পাপ্পু হিসেবে তুলে ধরা কংগ্রেসের রাহুল গাঁধী কিন্তু গত দু’দিন ধরে আটকে পড়া এই ছাত্রছাত্রীদের ছবি ও ভিডিয়ো পোস্ট করে বার বার ভারত সরকারকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন। এ দিন, একজন ভারতীয় মেডিক্যাল পড়ুয়ার মৃত্যুও হল।
নরেন্দ্র মোদী সরকার যে সব দিক থেকেই চরম ব্যর্থ, ক্রমেই দেশের মানুষ বুঝতে পারছে। গত কাল বাজপেয়ী কালে দেশের অর্থমন্ত্রী, প্রবীণ রাজনীতবিদ ও একদা আমলা যশবন্ত সিনহা টুইট করে জানিয়েছেন, ১৯৯০ সালে ইরাক কুয়েত আক্রমণ করার সময় ১ লাখ ৭০ হাজার ভারতীয়কে বিমানে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। তখন মাত্র মাত্র ৭ মাসের জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন চন্দ্রশেখর। বিদেশমন্ত্রী ইন্দ্র কুমার গুজরাল। পরে সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালে ‘এয়ার লিফট’ নামে  একটি সিনেমা তৈরি হয়। যার প্রধান চরিত্র বা হিরো ছিলেন মোদীর সব ব্যাপারেই, এমনকি আম খাওয়া নিয়েও মুগ্ধ (লোকসভা ভোটের আগে একমাত্র তাঁকেই ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন মোদী) অক্ষয় কুমার। যিনি আবার আদতে কানাডার নাগরিক বলে এ দেশের ভোটার নন।
আমাদের দেশের দুর্ভাগ্য এটাই। আরও দুর্ভাগ্য মাত্র দুই দিন আগেই রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ভারত চিনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাশিয়ার এই এক তরফা যুদ্ধের বিরুদ্ধে ভোট দানে বিরত ছিল! বিবৃতিতে বলেছিল, দুই পক্ষ আলোচনায় বসে সংঘাত বন্ধ করতে হবে। আসল কারণ নাকি মোদী জমানায় ভারত বিদেশি অস্ত্রের ৪৯% রাশিয়া থেকেই কিনেছে। তাই ভবিষ্যতে ওই সব অস্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণের কথা ভেবেই নাকি ওদের পক্ষে থাকতে হবে!
(লেখা ফেসবুক থেকে নেওয়া। মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)