অনিমেষ বৈশ্য

স্কুল-টুলগুলো চিরতরে বন্ধ করে দিলেই হয়। গরম পড়ল কি পড়ল না, ৪৫ দিন ছুটি! শুধু ছুটি আর ছুটি। লেখাপড়ার দরকার নেই। এ বার পড়ুয়ারা নিজের নামের বানানটাও বোধহয় ভুলে যাবে। গরম কি এ দেশে নতুন? আমাদের ইস্কুলে বিদ্যুৎ ছিল না। গরমও এ-রকমই পড়ত। সবাই হেঁটে ইস্কুলে আসত। কেউ কোনও দিন গরমে অসুস্থ হয়েছে বলে মনে পড়ে না।  ৪৫ দিন ছুটিও পাইনি কোনওদিন। লেখাপড়া বন্ধক রেখে ফোকটে জনপ্রিয় হওয়ার চেষ্টা এ বার বন্ধ হোক। অবিশ্যি এতে আদৌ জনপ্রিয় হওয়া যায় কি না, জানি না। তবে কেউ কেউ ভাবছেন নিশ্চয় যায়। না হলে এত ছুটির সুনামি কেন?
গরমের ছুটি বড় মিঠে ছিল। কাঁচামিঠে আমের মতো। একমাস ইস্কুলে আসতে হবে না বলে একটু মন খারাপ হতো বটে, কিন্তু যখন আমবনের ছায়ায় ঘুরতাম কিংবা পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে আর উঠতেই চাইতাম না, তখন মনে হতো ছুটিতে কত মুক্তির ধুলোখেলা। কিন্তু এত পাইকারি হারে ছুটি থাকলে তো গরমের ছুটির মজাটাও থাকে না। শুধু লেখাপড়া নয়, এত ছুটিতে ছুটির মজাটাই যাচ্ছে হারিয়ে। এ-ও এক ক্ষতি বটে।
এখন দেখছি, কোথাও কোনও বেচাল দেখলেই দাও আগে স্কুল বন্ধ করে। এ তো হীরক রাজের উপসর্গ। এই প্রজন্মের পড়ুয়ারা বড় হয়ে বলবে কী? আমার বাল্যকাল কেটেছে বিদ্যালয়ে না গিয়ে। এতে রবীন্দ্রনাথ হওয়া দূরের কথা, ডাল-ভাতই জোগাড় করতে পারছি না।
আজ গরম লাগছে তাই ছুটি, কাল বৃষ্টি পড়ছে তাই ছুটি, পরশু কবি তো বলেইছেন, আজ আমাদের ছুটি ও ভাই, আজ আমাদের ছুটি।
মেঘের কোলে রোদ হাসলেও ছুটি, রোদ চোখ রাঙালেও ছুটি। সন্ধি-সমাস সবার ছুটি। আহা হাহা হা।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)