সংবাদমাধ্যম ও সমাজমাধ্যমের সৌজন্যে রাজেশ খান এখন পরিচিত মুখ। পেশায় কলেজ শিক্ষক রাজেশ এ বার নির্বাচনে করিমপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল প্রার্থী। তাঁর লক্ষ্য একটাই— গ্রামের উন্নয়ন। রাজেশের সঙ্গে কথা বললেন সাদাকালোর প্রতিনিধিপ্রীতম সাহা।
সাদাকালো: হঠাৎ রাজনীতিতে কেন?
রাজেশ: দেখুন, ‘হঠাৎ’ শব্দটিতে আমার একটু আপত্তি আছে। কোনও রাখঢাক না করেই বলি, আমি বরাবর তৃণমূলের সমর্থক। আর আপত্তির কথা বললাম কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়েও আমি টিএমসিপি-র ফ্যাকাল্টি রিপ্রেজেন্টিভ ছিলাম। দেখবেন, অনেকেই অভিযোগ করছেন— ‘রাজনীতিটা দিনদিন দুর্নীতি, নোংরামিতে ভরে যাচ্ছে। রাজনীতি আর আগের মতো নেই। … ইত্যাদি।’ অথচ যাঁরা বলছেন তাঁরা কিন্তু তাঁদের ছেলেমেয়েদের রাজনীতিতে উৎসাহ দিচ্ছেন না। তার ফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে। শিক্ষিত, নবীন প্রজন্ম রাজনীতিতে না এলে চলবে কী করে?
রাজেশ: তা হবে না কেন? তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন তামাম রাজ্যের কোণায় কোণায় পৌঁছে গিয়েছে। আর এ কথা চরম নিন্দুকেও অস্বীকার করতে পারবেন না। তবে আমি আমার এলাকার কতগুলো বিষয়কে চিহ্নিত করেছি। ভোটে জিতলে সর্বপ্রথমে নির্দিষ্ট ভাবে সেগুলো নিয়েই কাজ করতে চাই।
সাদাকালো: যেমন?
রাজেশ: আমি দাঁড়িয়েছি করিমপুর ২ ব্লকের মুরুটিয়া পঞ্চায়েত সমিতির ১৬ নম্বর অংশে। ওই অংশের মধ্যে রয়েছে মুরুটিয়া শেখপাড়া, মুরুটিয়া দাসপাড়া, শঙ্খনগর এবং মাধপুর। এই এলাকাগুলোর বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজ ও শঙ্খশিল্পের উপর নির্ভরশীল। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর শুধু এই এলাকাই নয়, বহু এলাকার মানুষ নির্ভরশীল সেটা হল ভৈরব নদ। সাধারণ মানুষের দাবি, এই তিনটি বিষয়ের উপর নজর দেওয়া হোক। জনাদেশ পেলে আমি এই তিনটি বিষয় নিয়েই কাজ তো করবই। সেই সঙ্গে আরও একটি জিনিস আমি করতে চাই, যাঁরা আমারই মতো দারিদ্রকে সঙ্গী করে পড়াশোনা করছেন, আমি তাঁদের পাশেও দাঁড়াব।
সাদাকালো: আপনার বাড়ি তো মুরুটিয়ায়। মুরুটিয়া থেকে পূর্ব মেদিনীপুর কলেজে শিক্ষকতা। আপনার এই জার্নির কথা একটু বলুন।
রাজেশ: আমরা তিন ভাইবোন। আমাদের শৈশব কেটেছে দারিদ্র্য ও কষ্টকে সঙ্গী করে। আমার বাবার চায়ের দোকান থেকে যা আয় হতো তা দিয়েই আমাদের তিন ভাইবোনের লেখাপড়া ও সংসার চলত। পাড়াপড়শিদের অনেকেই আমাদের লেখাপড়ায় সাহায্য করেছেন। তাঁদের কাছে ঋণ ও কৃতজ্ঞতার সীমা নেই। এখন অবশ্য পরিস্থিতি বদলেছে। তবে বাবা কিন্তু আজও চায়ের দোকান বন্ধ করেননি। বাবা প্রতিনিয়ত আমাদের শেখান, অতীতকে না ভুলতে। তিন ভাইবোনের মধ্যে আমি বড়। মেজ ভাই এমফিল করছে। ছোট বোন বিএ পাশ করার পরে বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
সাদাকালো: আপনার লেখাপড়া…
রাজেশ: মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছি বালিয়াডাঙা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। ২০১০ সালে করিমপুর পান্নাদেবী কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক। এমএ (লোকসংস্কৃতি ও বাংলায়) করেছি কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বেলুড় মঠ রামকৃষ্ণ মিশন থেকে বিএড করি ২০১৫ সালে। ২০১৭ সালে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল। এ বছরই পিএইচডি-র থিসিস জমা দিয়েছি।
সাদাকালো: রাজনীতিতে আপনার আদর্শ কে?
রাজেশ: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে যদি কারও নাম বলতেই হয় তাহলে এক নম্বরে যিনি থাকবেন তিনি মহুয়া মৈত্র। যাঁকে আমি করিমপুরের রূপকার মনে করি। করিমপুরের সঙ্গে তাঁর আত্মার টান। নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকে, মানুষকে ভালোবেসে, কী ভাবে উন্নয়ন করা যায় তা প্রতিনিয়ত মহুয়া ম্যাডামের কাছে শিখি। এখনও শিখছি।
সাদাকালো: আপনার ওখানে ভোটের হাওয়া কেমন বুঝছেন?
রাজেশ: বাড়ি বাড়ি প্রচারে জোর দিয়েছি। প্রচারে সাহায্য করেছেন আমাদের বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহ রায়, মুরুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দেবব্রত ধর (রূপা)। এলাকার মানুষকে আন্তরিক ভাবে বোঝানের চেষ্টা করেছি, কেন আমি ভোটে দাঁড়িয়েছি। আর আমিও তো এই এলাকার ভূমিপুত্র। নিজের এলাকার জন্য কিছু করতে পারার চেয়ে বড় আনন্দ আর কোনও কিছুতে নেই। জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী। তবে শেষ কথা তো বলবেন এলাকার মানুষ। তাঁরা যে রায় দেবেন, আমি মাথা পেতে নেব।
সাদাকালো: ভোটে না দাঁড়ালে এ ভাবে কি নিজের গ্রামে ফিরে আসতে পারতেন?
রাজেশ: দেখুন এটা অনেকটা সেই সেই মহীনের ঘোড়াগুলির গানটির মতো— ‘ফিরব বলে ফেরা যায় নাকি!’ তবে ঘরে ফিরতে কার না মন চায়! আমিও ফিরলাম। এই ভোটে দাঁড়ানোর সৌজন্যে।