সুদীপ জোয়ারদার
বিষ্ণু: দেবর্ষি, মর্ত্যের সব কুশল তো?
নারদ: আজ্ঞে হ্যাঁ প্রভু। আর যে ভূখণ্ড দেবতাদেরও লীলাভূমি হওয়ার দাবি রাখে, যেখানে বাঙালি নামক এক জাতি বসবাস করে সেখানকার সংবাদ তো অতীব মধুর।
বিষ্ণু: আমি সেই পবিত্রভূমির সংবাদ শুনতে বড়ই আগ্রহী দেবর্ষি। বিলম্ব না করে আপনি পরিবেশন করুন।
নারদ: প্রভু, আপনাকে তো আগেই বলেছি সেখানে দেশসেবার জন্য কেমন লাইন পড়ে যায়। কিন্তু সবাই যদি সেবক হয় তবে সেবিত কে হবেন! তাই একটা নিয়ম রাখতেই হয়। যাঁরা প্রবল আগ্রহী একটা কাগজে তাঁদের নাম লিখে জনগণকে দেওয়া হয় পছন্দের মানুষ বাছতে। জনগণ পছন্দের মানুষের নামের পাশে ছাপ দেয়।
বিষ্ণু: আহা, ক্ষুদ্র মানবের কী অপূর্ব বৌদ্ধিক কর্মকাণ্ড! দেবর্ষি আপনি বলুন…
নারদ: প্রভু মানুষের ছাপ মারা সম্পন্ন হলে সেই কাগজগুলি গোনা হয়, দেশসেবায় প্রবল আগ্রহীদের মধ্যে কাকে বেশি মানুষ চেয়েছেন দেখার জন্য। তো এরকমই এক জায়গায় একজন যখন দেখলেন, মানুষ তাকে চায়নি, তিনি মনের দুঃখে ওই ছাপ দেওয়া কিছু কাগজ খেয়ে ফেলেছেন।
বিষ্ণু: সাধু, সাধু! অপদ্রব্য ভক্ষণ করায় মানুষটির আয়ু বা শরীর যাতে কোনওভাবেই সঙ্কটে না পড়ে সেজন্য দেবর্ষি আপনি যাওয়ার পথে চিত্রগুপ্তের দরবার হয়ে যাবেন! তেমন হলে আমি ধন্বন্তরিকে ছদ্মবেশে পাঠাব তাঁর শরীর ঠিক করার জন্য।
নারদ: সে সবের প্রয়োজন নেই প্রভু! তিনি সামলে উঠেছেন। কাগজ খেতে তাঁর নাকি খারাপও লাগেনি। বলেছেন কাগজ তো কোন ছার, দেশসেবার সুযোগ পেতে তিনি আপন বিষ্ঠাও ভক্ষণ করতে রাজি। কতটা দেশসেবার ইচ্ছে থাকলে এমন হতে পারে ভাবুন প্রভু!
বিষ্ণু: আমি মর্ত্যের এই অংশটির কথা যত শুনছি, ততই অভিভূত হচ্ছি। দেবর্ষি, একটা কথা জানতে ইচ্ছে করে, ‘সু’ আর ‘কু’ দুই-ই তো মানবের মধ্যে দেওয়া হয়েছিল। কু-তাড়িত মানুষ কি আজকাল ওখানে একেবারেই নেই?
নারদ: খুবই কম আছে, তবে আছে প্রভু। আমি শুনে এসেছি, তাঁরা অনেক জায়গায় দেশসেবক বাছার কাজে বিঘ্ন তৈরি করেছেন।
বিষ্ণু: কী রকম, একটু বিশদে বলুন দেবর্ষি।
নারদ: প্রভু আপনারা তো মানুষে মানুষে বুদ্ধির তারতম্য দিয়েই ধরাধামে পাঠিয়েছেন। অথচ এটা কু-তাড়িত মানুষজন স্বীকার করতে চান না। তাঁদের মতে, সব মানুষই সমান। কিন্তু প্রভু, বুদ্ধি কম থাকলে যোগ্য দেশসেবক বাছতে তো ভুল হয়ে যেতেই পারে! সুজন বুদ্ধিমানেরা কি এই ভুল বসে দেখতে পারেন? ফলে তাঁদের একটু এগিয়ে আসতেই হয়…
বিষ্ণু: এতে ভুল কোথায় দেবর্ষি? এটাই তো হওয়া উচিত। আমিও তো অনেকবার দেবতাদের ভুল থেকে বিরত করেছি!
নারদ: প্রভু এ কথা কু-তাড়িত লোকগুলোকে কে বোঝাবে? তাঁরা কোথাও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে, কোথাও নির্বাচন কেন্দ্রের কাজ করতে গিয়ে বাধা দিয়েছেন সুজন বুদ্ধিমানদের! কিছুতেই তাঁরা এই বাছাবাছির কাজে অন্য কাউকে ঢুকতে দেবেন না!
বিষ্ণু: ভারী অন্যায়!
নারদ: সুজন বুদ্ধিমানেরা বাধ্য হয়ে অনেক জায়গায় শক্তি প্রয়োগ করেছেন। বুদ্ধিতে দুর্বলদের ভুল ছাপ দেওয়া কাগজ পালটে নিজেদের ছাপ মারা কাগজ ঢুকিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য সব জায়গায় এঁরা সফল হতে পারেননি, ওই কু-তাড়িত মানুষগুলোর জন্য।
বিষ্ণু: সফল সব জায়গায় হলে তো মানবেরই উপকার হত, দেবর্ষি!
নারদ: প্রভু দুশ্চিন্তার কারণ খুব একটা নেই। কারণ আসার সময় দেখে এসেছি, কু-তাড়িত মানুষেরা বিছানা নিয়েছেন শোকে। তার মানে চেষ্টা করেও মানবের খুব বেশি ক্ষতি তাঁরা করে উঠতে পারেননি।
বিষ্ণু: আচ্ছা দেবর্ষি এই ‘সু’ তাড়িত মানুষদের প্রধানরা কেমন, দেখেছেন কি তাঁদের?
নারদ: দেখেছি প্রভু এক আধবার। রাজা বেন, শিবি, হরিশ্চন্দ্র সকলের মহৎ হৃদয় একত্রিত করলেও এঁদের হৃদয়ের কাছে তা কণামাত্র হবে। এতই বিশাল এতই আগাধ তাঁদের হৃদয়ের বিস্তার। প্রভু মানব যে এই উচ্চতায় পৌঁছতে পারে আপনি এঁদের না দেখলে ভাবতেও পারবেন না।
বিষ্ণু: এমন মানুষজনের পুণ্যকথা শ্রবণেই তো অন্তর বড় পুলকিত হল দেবর্ষি। দেখলে না জানি কী হবে!
নারদ: প্রভু এঁদের চেহারাও দেবতাদের সদৃশ। কেবল দেবতাদের সঙ্গে একটাই অমিল, এঁদের করতল রক্তের মতো লাল।
বিষ্ণু: করতল রক্তের মতো লাল! রক্তের মতো! এমন মানবকায়া ব্রহ্মা সৃজন করেছেন! না না, তেমন হলে তো আমি জানতাম… (বিষ্ণু চিন্তান্বিত হলেন)
(এই লেখায় লেখকের বক্তব্য নিজস্ব এবং কাল্পনিকও বটে! ফিচার ছবিটি ইন্টারনেট থেকে নেওয়া।
এই বিভাগে লেখা পাঠান sadakalonewz@gmail.com— এই মেলে)