গৌতম অধিকারী

চারপাশে ঘটে-চলা এই সময়ের রাজনৈতিক, সামাজিক কোনও ঘটনা সম্পর্কে ইদানিং ফেসবুকে কিছু লিখি না। হয়তো কোথাও কিছু বলিও না। সময় আমাদের বলাটাকে মূল‍্যহীন করে দিয়েছে এটা বেশ বুঝতে পারি।
কিন্তু এই খবরটা শুনে খারাপ লেগেছে, খুব খারাপ। এধরনের অন্য কোনও ঘটনা ঘটলেও যেমন খারাপ লাগে, তেমনটাই। না আর একটু বেশি। কারণ আমি স্বপ্নদীপ কুন্ডু নামের ছেলেটাকে চিনতাম। প্রত‍্যক্ষভাবে কথা হয়নি। ফোনে কথা হয়েছে। ওর মাধ‍্যমিক পরীক্ষার সময় ওর বাবা, আমার অত্যন্ত স্নেহের অনুজপ্রতিম রামপ্রসাদ ফোন করেছিল। করোনাকালে অনলাইন ক্লাস নিয়েছিলাম, সরকারের হয়ে বিভিন্ন চ‍্যানেলে। রামপ্রসাদ ফোন করে ধরিয়ে দিয়েছিল ছেলেকে। তার নাম স্বপ্নদীপ‌। সে তখন মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে বোধহয়, অথবা তার পরের বার। হোয়াটসঅ্যাপে অনেক পড়া বোঝাতে হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপে নোটস পাঠিয়েছি। সেগুলো এখনও অক্ষত আমার ফোনে। না করতে পারিনি। সম্পর্কটা একপুরুষের নয়, কয়েক পুরুষের। স্বপ্নদীপের ঠাকুর্দা আমার বাবার বন্ধু ছিলেন। ছোটোখাটো ব‍্যবসায়ী। দারিদ্র্য নিত্যসঙ্গী। রামপ্রসাদ, স্বপ্নদীপের বাবা পড়াশোনা করতে করতে সংসারের হাল ধরতে দোকানে দোকানে মালপত্র সাপ্লাই দিত।
বড় স্বপ্ন ছিল রামপ্রসাদের। স্বপ্নদীপেরও। বগুলা হাইস্কুলের কৃতি ছাত্র স্বপ্নদীপ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল বাংলা সাহিত্যে। ওর এই বিষয় বাছাইয়ের নেপথ্যে নাকি আমার বা আরও অনেকের পরোক্ষ ভূমিকা ছিল, যাঁদের সে চিনত। এমনটাই শুনেছি। সেই স্বপ্নদীপ, একটা ঝকঝকে অধ‍্যাবসায়ী ছাত্র যে শহর কলকাতা থেকে প্রায় একশো তিরিশ কিলোমিটার দূরের গ্রাম থেকে পড়তে এসেছিল, শহর তাকে বাঁচতে দিল না।
সারাদিন টেলিভিশন চ্যানেলে দেখিনি। কিছুটা সময় আগে ফোন এল এক অনুজের। তারপর খবরে দেখে কয়েকটি প্রশ্ন জাগছে মনে—
১) মাত্র তিন দিন আগে স্বপ্নদীপ মাকে জানিয়েছিল, ভালো লাগছে। খুব ভালো লাগছে।
২) গতকাল কী এমন হল, বাবাকে ফোন করে জানাল, খুব চাপে আছি বাবা।
৩) রাত ১২টার সময় ভারী কিছু পড়ার শব্দে সহ-আবাসিকরা তাকে নীচে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। কিন্তু সংবাদমাধ্যম বলছে তার শরীরে পোশাক ছিল না।
তাহলে…?
না আত্মহত্যা করতে পারে না স্বপ্নদীপ। এটা আমাদের বিশ্বাস। দুর্ঘটনা, নাকি অন্য কিছু!
আমরা সত‍্যিকারের তদন্ত চাইছি, বিচার চাইছি। হ‍্যাঁ, বিচার ভিক্ষা চাইছি।
স্বপ্নদীপ শুধু মারা যায়নি, তার মৃত্যুতে এক বাবা একজন মা-ও জীবন্মৃত হয়ে গেল।

(ফিচার ছবি ইন্টারনেট থেকে নেওয়া। লেখকের বক্তব্য নিজস্ব। লেখা পাঠাতে পারেন এই মেলে— sadakalonewz@gmail.com)